জমি তৈরি
- পানের জমি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে।
- আবাদি জমিতে হালকা চাষ দিতে হবে এবং অনাবাদি জমিতে গভীরভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- গাছের গুঁড়ি, গুল্ম জাতীয় গাছের শিকড় ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
- জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা বাছাই করে, মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে।
- বৃষ্টির পানি জমা বন্ধ করতে জমি একদিকে সামান্য ঢালু রাখতে হবে।
- জমি চাষ করে কিছুদিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
- মাঝে মাঝে লাঙ্গল দিয়ে মাটি ওলট-পালট করে দিতে হবে।
- চারাগাছের জন্য পর্যাপ্ত ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- বাতাস বেশি হলে চারদিকে বাতাস প্রতিরোধী গাছ লাগাতে হবে।
- সেচ ও পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- পানের লতা লাগানোর আগে কোন সার প্রয়োগ করা যাবে না।
বেড তৈরি
- আয়তনের উপর ভিত্তি করে চলাফেরার সুবিধার জন্য জমিকে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করে নিতে হবে।
- প্রতিটি ব্লকে কতগুলো বেড থাকবে সেখানে পান গাছ লাগাতে হবে।
- প্রতিটি বেড ৫০ সে.মি. চওড়া এবং ১৫ সে.মি. উঁচু হবে।
- প্রতি বেডে দুইটি সারি থাকবে।
- সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০-২৫ সে.মি.।
- প্রতিটি সারির বাইরের দিকে ১২.৫ সে.মি. জায়গা ফাঁকা থাকবে।
- প্রতিটি সারিতে একটি গাছ থেকে অপর গাছের দূরত্ব হবে ১৫-২০ সে.মি.।
- দুই সারি বিশিষ্ট একটি বেড থেকে অপর বেডের দূরত্ব হবে ৫০ সে.মি.।
পানের কাটিং তৈরি
- পানের বংশবিস্তার লতা বা কাটিং এর মাধ্যমে করতে হবে।
- কাটিং তৈরির জন্য সুস্থ সবল ও রোগহীন বীজ-লতা বাছাই করতে হবে।
- বাছাই করা লতা থেকে ৭-৮ মাস পান সংগ্রহ বন্ধ রাখতে হবে।
- বীজতলার বয়স ২-৩ বছরের মধ্যে হলে ভালো হবে।
- পানের লতার উপরের এবং মাঝের অংশ কাটিং হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
- কাটিং এর দৈর্ঘ্য ৩০-৪৫ সে.মি. হতে হবে। তবে অঞ্চলভেদে ১০ সে.মি. অথবা ৮০ সে.মি.ও হতে পারে।
- প্রতি ৩৩ শতাংশ (১বিঘা) জমির জন্য ৮৫৮০-৯২৪০টি কাটিং লাগবে।
- বীজতলা থেকে কাটিং সংগ্রহ করে প্রায় ৮০টির মতো কাটিং একসাথে বেঁধে একটা বান্ডিল তৈরি করতে হবে।
- বান্ডিল কাদা মেখে ছায়া আছে এমন জায়গায় রেখে প্রতিদিন ২-৩ বার নতুন করে কাদা লাগিয়ে দিতে হবে অথবা পানি দিয়ে শুকিয়ে যাওয়া কাদা নরম করে দিতে হবে।
- ২-৩ দিনের মধ্যে কাটিং এর গিট থেকে নতুন শিকড় বের হলে কাটিং লাগানোর উপযুক্ত হবে।
- ৪ দিনের বেশি কাটিং রাখা যাবে না।
চারা রোপণ
- প্রতিটি বেডে দুটি সারি থাকবে। প্রতিটি সারিতে ১৫-২০ সে.মি. পরপর একটি করে গর্ত করতে হবে।
- প্রতিটি গর্তে একটি করে কাটিং সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হবে।
- রোপণের এক মাসের মধ্যে গিরা থেকে অঙ্কুর এবং আগায় নতুন কুশি বের হবে।
- এ সময় যখন লতা বড় হতে থাকবে তখন নতুন লতা দু’মিটার লম্বা চিকন বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে।
- কাটিং লাগানোর পর যদি কিছু গাছ মারা যায় তাহলে তা সরিয়ে নতুন কাটিং দিয়ে শূণ্যস্থান পূরণ করতে হবে।
- চারা রোপণের সময়
স্থানীয় আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে
চারা রোপণের সময় ঠিক করতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত
পানের চারা লাগানো হয়ে থাকে। কোথাও আবার শীতের শুরুতে এবং শীতের শেষেও পানের চারা
লাগানো হয়। নিচে অঞ্চলভেদে পানের চারা লাগানোর সময় দেয়া হলো-
জেলা
|
সময়
|
বরিশাল
|
জুন-জুলাই
|
রাজশাহী
|
ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল
|
বাগেরহাট
|
জুন-জুলাই
|
নড়াইল
|
মার্চ-এপ্রিল
|
চট্টগ্রাম
|
জুন-সেপ্টেম্বর
|
কক্সবাজার
|
আগস্ট-সেপ্টেম্বর
|
যশোর
|
জুন-আগস্ট
|
সেচ ও নিষ্কাশন
- জমি যাতে খুব বেশি ভেজা বা শুকনো না হয় সেজন্য পানের জমিতে ঘনঘন হালকা সেচ দিতে হবে।
- বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- সেচ দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন আধা ঘণ্টার বেশি পানি জমে না থাকে।
- লতা নামানোর সময় স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন ঘন সেচ দিতে হবে।
লতা নামানো
- পানের লতা বরজের (পান চাষের জন্য তৈরি ছাউনি বা ঘর) ছাউনি পর্যন্ত (২-২.৫ মিটার উচ্চতা) পৌঁছালে তা টেনে নিচে নামিয়ে পাতাছাড়া অংশকে পেঁচিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একে বলে পানের লতা নামানো।
- বছরে সাধরাণত দু’বার (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ এপ্রিল এবং ১৫ জুলাই-১৫ সেপ্টেম্বর) পানের লতা নামানো হয়।
- গাছের বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে লতা নামাতে হবে। বৃদ্ধি বেশি হলে ঘনঘন নামাতে হবে।
- লতা নামানোর আগে সংগ্রহ করার যোগ্য সব পান তুলে ফেলতে হবে।
- লতার উপরের ৩০-৫০ সে.মি. অংশ মাটির উপরে রেখে নিচের অংশটুকু গোল করে অথবা বাংলা ৪ এর মতো করে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে দিতে হবে।
চাষের সময় পরিচর্যা
- পানে বিভিন্ন ধরণের জলজ, স্থলজ এবং লতা জাতীয় গাছের আক্রমণ হয়। তাই সময়মতো আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- বর্ষা মৌসুমে মাসে ১-২ বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভাল
ফলন পেতে হলে পান চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা
করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার ব্যবহার করতে হবে, তাহলে মাটির গুণাগুন ও পরিবেশ ভাল
থাকবে।
পান সংগ্রহ
- পানের লতা লাগানোর ৬-৮ মাসের মধ্যে পান পাতা তোলার উপযুক্ত হবে।
- রবি মৌসুমে দেরিতে এবং খরিফ মৌসুমে দ্রুত পান সংগ্রহ করা যাবে।
- বর্ষাকালে প্রতিটি লতা থেকে সপ্তাহে দু’বার পাকা পাতা সংগ্রহ করা যাবে।
- রবি মৌসুমে এবং খরার সময়ে নিয়মিত সেচের ব্যবস্থা করতে পারলে পাতা সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো যাবে।
- পাতা হলুদ হওয়ার আগে না তুললে বাজারদর কমে যাবে।
- বোঁটাসহ পান লতা থেকে হাত দিয়ে ছিঁড়ে সংগ্রহ করতে হবে।
সতর্কতা
- পানে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- বালাইনাশক ছিটানোর আগে পান তুলে নিতে হবে এবং ব্যবহারের কমপক্ষে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পান পাতা সংগ্রহ করা যাবে না।
বাছাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণ
- পান সংগ্রহ করার পর বাছাই করে ছোট, কাঁচা, ছেঁড়া, কাটা, পোকা ও রোগে আক্রান্ত পান বাদ দিতে হবে।
- পানের আকার, খাওয়ার উপযোগী, পুরুত্ব ইত্যাদি অনুযায়ী পান বাছাই করতে হবে।
- পাতা বেশিক্ষণ সতেজ রাখার জন্য প্যাকিং করার সময় একটু পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
- পান পচনশীল হওয়ায় পান তুলার পরপরই তা বিক্রি করতে হবে।
পান চাষের আনুমানিক খরচ(১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পান
উৎপাদনের জন্য)
খরচের খাত
|
পরিমাণ
|
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
|
পানের
কাটিং
|
৮৫৮০-৯২৪০
টি কাটিং
|
১০৪০
|
জমি তৈরি
|
৩/৪ বার
|
১৫০০
|
পানি সেচ
|
আনুমানিক ৪
ঘণ্টা
|
৪০০
|
শ্রমিক
|
২৫ জন
(প্রতিজন ২০০)
|
৫০০০
|
সার
|
পাথর চুন=৫
কেজি (১ কেজি ২০ টাকা)=১০০ টাকা
খৈলের গুড়া=১৫ কেজি (১ কেজি ১০ টাকা)=১৫০ টাকা
টিএসপি=১০
কেজি (১ কেজি ৩০ টাকা)=৩০০ টাকা
মিউরেট অব
পটাশ= ১.২৫ কেজি (১ কেজি ৩০ টাকা)=৩৮ টাকা
|
৫৮৮
|
প্রয়োজন
অনুসারে জৈব সার
|
নিজস্ব
|
|
জমি ভাড়া
|
এক বছর
|
৪৫০০
|
মোট খরচ
|
১৩,০২৮
|
পূর্বের অংশ (পার্ট-১)/ previous part(part-1)
No comments:
Post a Comment